নতুন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সংসদে কড়া সমালোচনার জবাব শিক্ষামন্ত্রীর

0
(0)

নতুন শিক্ষাব্যবস্থা অভিযান,শিক্ষা ব্যবস্থা

রোববার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় বিলটির সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায়  প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যকালে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী।

পরীক্ষা নিয়ে মন্তব্য

দীপু মনি বলেন, “আগে কেবল অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা হতো। এখন ধারাবাহিক মূল্যায়ন হয়। প্রতিদিন শিক্ষার্থী কি শিখছে? সে কেমন করে শিখছে। সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে কি না, তার সবকিছুর মূল্যায়ন হয়। সেই মূল্যায়ন নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এজন্য অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা একটি সহজে করতে পারবেন। এখন ম্যানুয়ালি করতে হচ্ছে বলে একটু সমস্যা হচ্ছে।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “নতুন যেকোনো কিছু গ্রহণের ক্ষেত্রে তো অনেক রকম রেজিস্ট্যান্স থাকে। যে কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন গুটিকয়েক অ্যাসাইনমেন্ট, গ্রুপ ওয়ার্ক গুগল থেকে দিচ্ছে। কেবল বই নয়, এখন নানারকম সোর্স থেকে শিক্ষার্থীরা তথ্য নেবে। সেগুলো নিয়ে গ্রুপ ওয়ার্ক করতে এবং উপস্থাপন করবে।”

নতুন শিক্ষাব্যবস্থা চালুর কারণ

দিপু মনি বলেন,”আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্বমানের যে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়, সেখানে তফাৎটা কোথায়—এটা নিয়ে বারবার আলাপ হয়েছে। সফট স্কিলের জায়গায় আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি। আমরা কমিউনিকেট করতে পারছি না। আমাদের সূক্ষ্ম চিন্তার দক্ষতা। আমাদের সমস্যা নিরূপণ ও সমাধানের দক্ষতা, আমাদের কোলাবরেশনের দক্ষতা। আমরা দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা এখন এই কাজটি একবারে শৈশব-কৈশর থেকে রপ্ত করবে। সেটা না করলে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেগুলোকে ক্যাপসুল আকারে গিলে খেতে দিলে সম্ভব হয় না। এজন্য নতুন শিক্ষাক্রমে এই বিষয়গুলো শেখানো হচ্ছে।”

ডিমভাজি ও আলুভাজি

শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে ডিমভাজি ও আলুভাজি করে আনার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে দীপু মনি বলেন, “ডিমভাজি-আলুভর্তার কথা প্রায়শ বলা হচ্ছে। এটি একেবারেই অপপ্রচার। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২১টি অধ্যায় আছে। এর মধ্যে জীবন-জীবিকার একটি অধ্যায় হচ্ছে রান্না। সেই রান্নাটি কেন? আমাদের শিক্ষার্থীরা দেখে বাড়িতে মা কিংবা অন্য কোনো একজন রান্না করে। সেই বিষয়টি যে জরুরি, সে তা শেখে না। একজন মানুষ যখন রান্না করবে, সে রান্নার বিষয়টি চিন্তা করবে। একটি ১২১টি অধ্যায়ের মাত্র একটি এবং সারা বছরে একদিন মাত্র বিদ্যালয়ে পিকনিক করে রান্নাটা দেখবে। এটা বাড়িতে নয়, যেটা বাড়িতে দেওয়া হচ্ছে সেটা শিক্ষকের না বোঝার ফল। সেজন্য শিক্ষকদের বার বার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।”

কোচিং ব্যবসা

শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন—এমন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “যারা কোচিংয়ে ব্যস্ত থাকেন, কোচিং ব্যবসায়ীরা এটাকে বিকৃত করার জন্য তারা কিছুটা এটা করেছেন। শহরের কিছু বিদ্যালয় এটা করছেন। তাদেরকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বাচ্চারা স্কুলে পিকনিক করে রান্না শিখবে। এই রান্নার করাটাও যে একটা আর্ট, এর মধ্যে একটি পরিমিতিবোধ থাকতে হয়। অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় তার সবকিছুই শিখবে। আমরা কি পিকনিক করিনি? কাজেই এটা একটা অপপ্রচার করা হচ্ছে। বাড়ি থেকে রান্না করে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। যারা করছেন তারা এটা প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য করছে।

আন্দোলনকারীদের পেছনে কতিপয় শিক্ষকদের জড়িত থাকার অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কয়েক জায়গায় মানববন্ধন দেখেছি। আমরা তদন্ত করেছি। সেখানকার স্কুলগুলো জানিয়েছে, এই অভিভাবকেরা তাদের অভিভাবক নন। অনেকে কোনো অভিভাবকও নয়। এটা হলো মূলত কোচিং ব্যবসায়ী ও নোট গাইড ব্যবসায়ী। তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছে তাদের ব্যবসা হয়তো ওঠে যাবে। হাতে কলমে লিখে লিখে পরীক্ষা রাখার অর্থই হচ্ছে আমরা কোচিং ব্যবসাটা চালু রাখতে চাই।”

পরিশেষে মন্তব্য

তিনি আরও যোগ করেন ,”আমাদের যেটা দরকার শিক্ষার্থীদের থেকে আমরা সেই দক্ষতাটা পাচ্ছি। তারা কিন্তু অনেক কিছু লিখছে। এখন একটা কিছু লিখতে দেন লিখে দিতে পারে, বলতে দেন বলতে পারে, বানিয়ে দিতে বলেন বানিয়ে দিতে পারে।”

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

2 thoughts on “নতুন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সংসদে কড়া সমালোচনার জবাব শিক্ষামন্ত্রীর”

Leave a Comment