পানি দূষণের কারণ অনুসন্ধান ও অভিযান

0
(0)

পানি দূষণের কারণ প্রতিকার জীবের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিকারী পানির যে কোনো ভৌত বা রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তনকে পানি দূষণ বলে। কোনো এলাকায় পানি দূষণের উৎসকে দুভাগে ভাগ করা যায়, যথা- বিন্দু উৎস ও‌ অ-বিন্দু উৎস ।

বিন্দু উৎস (Point Sources)

পার করা যায় এমন একার বিল মাত্র যে মুহণ ঘটে তাকে বিন্দু ইংস দূষণ বলে। যেমন- কোন ফ্যাক্টরির পাইপ হতে দূষণ, এ দূষণ সহজে বিশোধন করা যায়। বিন্দু উৎসের উল্লেখযোগ্য উদ্দাষরণ হলো- কারখানা, পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ড্রেন নামার আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ গ্ল্যান্ট। বিন্দু উৎসের দূষকসমূহকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

গৃহস্থালী বর্জ্য পানি: এ উৎস থেকে যে সব দূষক পানির দূষণ ঘটায়, সেগুলো হলো- ভাসমান কথা, জৈব পদার্থ, ফসফরাস, ডিটারজেন্ট, তেল ও গ্রীজ, প্যাথোজেন প্রভৃতি। এ সব বর্জ্যর সাথে বিভিন্ন রোগ জীবাণু জলাশয়ে মিশে পানির দূষণ ঘটিত। ফলে আমাশয়, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগ হয়।

শিল্পজাত বর্জ্য পানির নিক্ষেপণ: এ উৎস থেকে যে সব দূষকের উদ্ভব ঘটে, সেগুলো হলো ভাসমান কঠিন পদার্থ, জৈব পদার্থ, ফসফরাস, নাইট্রোজেন, ধাতু প্রভৃতি। জৈব পদার্থের মধ্যে রঞ্জক পদার্থ, ডিটারজেন্ট, ক্লোরিনজাত কীটনাশক, জৈব দ্রাবক, অ্যারোমেটিক যৌগসমূষ অন্যতম। বিন্দু উৎস থেকে টন টন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ হ্রদ, নদ-নদীতে গিয়ে পড়ে। এতে পানি দূষিত হয়, DO হ্রাস পায় এবং BOD বৃদ্ধি পায়। চিত্র: পানি দূষণ (বিন্দু উৎস)

অ-বিন্দু উৎস (Non-point Sources)

বিভিন্ন বিন্দু উৎস হতে বিভিন্ন দূষিত পদার্থ একত্রিত হয়ে যে বৃহৎ পরিসার দূষণ ঘটায় তাকে অবিন্দ উৎস দূষণ বলে। এ দূষণ পরিশোধন সুরুষ ভাবিন্দু উৎস থেকে সৃষ্ট দূষক সমূহকে দুটি শ্রেণিতে শ্রেণিকরণ করা হয়; কৃষিজাত প্রবাহ ও নগর প্রবাহ।

কৃষিজাত প্রবাহ (agricultural run off) থেকে উৎসারিত দূষকসমূহ হলো- মৃত্তিকা ক্ষয়, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পশুর বর্জ্য, কীটনাশক প্রভৃতি। অপরদিকে নগর প্রবাহ (urban run off) থেকে উৎসারিত দূষক সমুত্ব হলো- তেল, গ্যাসোলিন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, কীটনাশক, পলিথিন, প্লাস্টিক পণ্যের অবশেষ ইত্যাদি। এছাড়াও লঞ্চ, স্টীমার, ইঞ্জিন চিত্র: পানি দূষণ (অবিন্দু উৎস) চালিত নৌকা থেকে নির্গত হাইড্রোকার্বন (ডিজেল) নদীর পানি দূষণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ঢাকা শহরের পার্শ্বস্থ তুরাগ, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণের ক্ষেত্রে নগর প্রবাহ, গৃহস্থালী বর্জ্য পানি ও শিল্পজাত বর্জ্য পানি বিশেষ ভূমিকা রাখে। গৃহস্থালী বর্জ্য পানি এবং শিল্প কারখানার বর্জ্য পানি সাধারণত নর্দমা বা খালের মাধ্যমে নদীতে পতিত হয়। অনুরূপভাবে, কর্ণফুলি ও সুরমা নদীর পানিও দূষণের কবলে আক্রান্ত।

পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ

পানির দূষণ হ্রাস বা প্রতিকার তিনটি উপায়ে সম্পন্ন করা সম্ভব, যথা-

১. আইনসম্মত, ২. প্রযুক্তিগত এবং ৩. ব্যক্তিগত উপায়।

১. আইনসম্মত উপায়ে পানির দূষণ নিয়ন্ত্রণ: এ কথা- অনদ্বীকার্য যে, দূষণমুক্স ভূ-পৃষ্ঠের (Surface water) এবং ভূগর্ভস্থ পানি একটি অমূল্য সম্পদ। কিন্তু, জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং পানির বাধাধীন অপচয়ে ও অদূরদর্শী ব্যবধারে দূষণমুক্ত পানির ভান্ডার কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশ সংকটের মুখে পানির সহবহার, আরক্ষণ এবং দূষণ নিরক্ষণ নিরস্তদের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেরে পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ আই হাগায়ন করা আশায়। এই আইনের অধীনে করে পরিবেশ সঞ্চতরের অনুমতি ব্যতীত কোনো যাতি বা প্রতিষ্ঠান বিশোভন বানিয়েছে কোনো তরল বা কঠিন বার্তা জলজ পরিবেশে নিক্ষেপ করতে পারবে না।

২. প্রযুক্তিগত উপায়ে পানির দূষণ নিয়ন্ত্রণ: বার্তা বিশোষন প্ল্যান্টের প্রবৃত্তি প্রয়োগ করে ভূ-পৃষ্ঠীয় এবং তৃপ মাধ্যমে কিংবা সাপের খাল বিকা প্রক্রিয়াকরণ গ্লান্টে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। প্রক্রিয়াকরণের পর অপবা অপসারিত পানিতে নিবাসকৃত আয়ে খাল বা নদীতে ফেলা হয়।।

৩. ব্যাক্তিগত উপায়ে পানির দূষণ নিয়ন্ত্রণ: বারিপর প্রচেষ্টায়ও পানির দূষণ হ্রাস করা সম্ভব। প্রতিতিয়াসনিক সার বা কীটনাশক, পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার না করা।

সৃষ্টিকারী ব্যস্ত রাসায়নিকের ব্যবধার হ্রাস করে পানির দূষণরোধ সম্ভব। যেখানে সেখানে ময়লা, আমাানা বা পলিথিন যা মোড়ক নিক্ষেপ না করে যথাস্থানে বর্জ্য ফেল্য আবশ্যক।রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ডিটারজেন্ট এবং অন্যান্য রাসায়নিকের বিধিনিষেধের মাধ্যমেও দূষ্যান্ত প্রতিকার ব্যক্তিগত পর্যায়ে সম্ভব। 

পানির প্রাকৃতিক দূষণ- আর্সেনিক দূষণ ও প্রভাব (Arsenic Contamination & Its Effect)

 শতকরা 97% মানুষ আজকে টিউবওয়েলের পানির উপর নির্ভরশীল। শালাদেশের থাক টিউবওয়েলের শতকরা 76 ভাগে আর্সেনিক রয়েছে বাকি 24% বন্দির সরকার এবং বিভিন্ন দেশি বিদেশি সংস্থার প্রমথয়তায় “National Policy for Arsenic Mitigation a Implementation Plan” বাস্তবায়নের পরও প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ লোক আর্সেনিকোসিস (Arsenicosis) আক্রান্ত হচ্ছে। অর্সেনিক দূষণ শরীরে ধীরে ধীরে হয় বলে মানুষ প্রাথমিক অবস্থায় বুঝতে পারে না, মানুষের হাত ও পায়ের তালুতে যখন কালচে দাগ বা ফোসকা পড়ে ব্ল‍্যাক ফুট ডিজিজ (Black foot duease)-এ উপনীত হয়। তখন মামুর তার শরীরে আর্সেনিক দূষণ বুঝতে পারে। সরকারি পর্যায়ে আর্সেনিক দূষিত টিউবওয়েলগুলো লাল এবং আর্সেনিক মুর টিউবওয়েলগুলো সবুজ রা দিয়ে চিহ্নিত করে দিয়েছিল। কথা ছিল লাল রং দেওয়া টিউবওয়েল থেকে মানুষ পানি দিয়ে খাবার তৈরি বা সরাসরি পান করার জন্য ব্যবহার করবে না। কিন্তু, গ্রামের সাধারণ মানুষ জেনে শুনে আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করে যাচ্ছে এবং ধীরে ধীরে মারাত্মক প্লামেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

আর্সেনিক রসায়ন

As এর পারমাণবিক সংখ্যা 33 এবং পারমাণবিক ভর 74.922। এটি পর্যায় সারণির ৪র্থ পর্যায়ের গ্রুপ 15 এ অবস্থিত

এর ইলেকট্রন বিন্যাস As-1s² 2s² 2p 3s 3p 3d 4s 4p’। এটি একটি অপধাতু।

আর্সেনিককে বিষের রাজা বলা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন পর্যায়ে আর্সেনিক ব্যবহার করা হত। কীটনাশক ও কাঠ প্রক্রিয়াজাতকরণে এখনও প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক ও আর্সেনিক, যৌগ ব্যবষার করা হয়। এগুলোর মাধ্যমে আর্সেনিক দূষণ সীমিত পর্যায়ে ছিল; কিন্তু যখন মানুষ ভূ-গর্ভস্থ পানি নিরাপদ মান করে ব্যবহার শুরু করলো তখনই পানিতে আর্সেনিক দূষণের ভয়াবহতা দেখা গেল।

প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট ভূ-গর্তো বিভিন্ন স্তরে আগে থেকেই প্রাকৃতিকভাবে আর্সেনিকের বিভিন্ন যৌগ ছিল। মানুষ যখন কৃষি ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে ভূ গর্ভস্থ পানির ব্যাপক ব্যবহার শুরু করলো তখন আর্সেনিক প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানিতে মিশতে শু করলো। কারণ, ভূগর্ভ থেকে ব্যাপক পরিমাণ পানি উত্তোলনের ফলে শিলান্তরে ফাঁকা স্থান সৃষ্টি হতে লাগল এব বায়ুদ্ধ অক্সিজেন আর্সেনিক যৌগকে দ্রবণীয় যৌগে পরিণত করে পানিতে মিশতে সহায়তা করলো। এক কা অক্সিজেন এবং অণুজীব দ্বারা অদ্রবণীয় আর্সেনিক যৌগ দ্রবণীয় আর্সেনিক যৌগে পরিণত হয় এবং আর্সেনিক দূষণ সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

মানুষের শরীরে আর্সেনিক বিষক্রিয়া

খাবার পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা (0.01 0.05) ppm উন্নত ধনী দেশগুলোতে গ্রহণযোগ্য মাত্রা 0.01ppm, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রা হলো 0.05 ppm 0.05 ppm সাধারণ অর্থ হলো প্রতি লিটার পানিতে 0.05mg আর্সেনিক থাকলে সে পানি পানের যোগ্য। ppm এর পূর্ণরূপ হলো parts per million। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু স্থানের নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের গড় পরিমাণ 0.25mgL’।

মানুষ যখন আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে সেটি রক্তের মাধ্যমে প্রথমে যকৃতে যায় এবং যকৃত আর্সেনিক যৌগকে কম বিষাক্ত যৌগে পরিণত করার চেষ্টা করে। যে কারণে পানির সাথে গৃহীত অধিকাংশ আর্সেনিক কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। কিছু পরিমাণ আর্সেনিক ত্বক, চুল, নখ এবং কিডনিতে জমা হতে থাকে। আর্সেনিকোসিস রোগ সহজে টের পাওয়া যায় না। পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর আর্সেনিকের বিষক্রিয়া নির্ভরশীল। আর্সেনিক মানুষের শরীরের বিভিন্ন এনজাইম ও প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে সম্পন্ন হয়, যখন হাত ও পায়ের ভালুতে দৃশ্যমান হয় তখন শরীরের ভেতরে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক গ্রহণের ফলে ব্লাড ও ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে। আর্সেনিকোসিসের শেষ পরিণতি ক্যান্সার এবং মৃত্যু অবধারিত। উল্লেখ্য, আর্সেনিকোসিস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।

আর্সেনিক দূষণের তথ্য

চিটাগাং (31%); খুলনা (26%); ঢাকা (23%), রাজশাহী (৩৯), সিভেট (৪%); বরিশাল (3%)

যেসব দেশে আর্সেনিক সমস্যা রয়েছে: বাংলাদেশ, ভারত, চিলি, ফিলিপাইন, আর্জেন্টিনা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে আর্সেনিক দূষণের শিকার জেলাগুলো- ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা,ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ইত্যাদি। যশোর জেলার শারশা থানার সমতা গ্রামের আর্সেনিক দূষণ সবচেয়ে বেশি।

আর্সেনিক দূষণ হতে মুক্তির উপায়

আর্সেনিক দূষণের কবল হতে রক্ষা পেতে যে সব উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে:

  1. অর্সেনিক দূষিত পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  2. পানির বিকল্প উৎস ব্যবহার করতে হবে এবং পানি ফিল্টার করে খেতে হবে।
  3. সত্তা ও সহজলভ্য প্রযুক্তি আবিষ্কার করে আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
  4. হান্ডি টিউবওয়েলের পরিবর্তে গভীর টিউবওয়েলের ব্যবষার বাড়াতে হবে। কারণ গভীর টিউবওয়েলে তুলনামূলক আর্সেনিক দূষণ কম।
  5. আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত মানুষকে অবশ্যই আর্সেনিকমুক্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

1 thought on “পানি দূষণের কারণ অনুসন্ধান ও অভিযান”

Leave a Comment

25-Second Timer
25
Code not found, visit another post.