বর্তমান পৃথিবীর মানুষের আরো কাছাকাছি চলে এসেছে । অর্থাৎ বর্তমান সময়ে কোন এক দেশের একটি নির্দিষ্ট ফসল সেদেশের সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং তা ছড়িয়ে পড়তেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । উদাহরণস্বরূপ,বাংলাদেশকে ধরি, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের ড্রাগন ফল এবং মাল্টা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। এছাড়া আরো কিছু ফল বর্তমান বাংলাদেশের বাজারে চলতেছে এগুলো মোটেও বাংলাদেশের স্থায়ীয় ফল ছিলো না । এগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত করা ফল। তেমনি বর্তমান বাংলাদেশের ব্যাপক জনপ্রিয় একটি ফল রামবুটান। এটি মূলত একটি বিদেশি ফল বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সকল বাজারে এ ফলটি দেখে মেলে। আজকে আমরা রামবুটান সম্পর্কে জানব।
পরিচিতি
রামবুটানের বৈজ্ঞানিক নাম Nephelium lappaceum। এটি Sapindaceae নামক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত । এই ফলটির আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনের ব্যাপক পাওয়া এই ফলটি। এটি ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার স্থানীয় একটি ফল । তবে রামবুটান শব্দটি চতুর্দশ শতাব্দীর একটি চীনা লেখায় উল্লেখ পাওয়া যায় ।
রামবুটানের গঠন
এই ফলটি ছোট, গোলাকার যা একটি খাঁচা-আকৃতির বাইরের আবরণে আবৃত থাকে। রামবুটানের ভেতরে সাদা রঙের মাংস থাকে , যা একটি বীজের চারপাশে থাকে। রামবুটানের ভেতরে অংশগ্রহণ দেখতে লিচুর মতো ।রামবুটানের স্বাদ মিষ্টি এবং অম্লযুক্ত।
একটি রামবুটানের উপাদান সমূহ (১০০ গ্রামে )
উপাদান | পরিমান |
ক্যালোরি | ৬৯কিলো ক্যালোরি |
কার্বোহাইড্রেট | ১৭ গ্রাম |
চর্বি | ০.৩ গ্রাম |
প্রোটিন | ১.২ গ্রাম |
ফাইবার | ২.৬ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৬৭ মিলিগ্রাম (প্রায় ৭৫% দৈনিক চাহিদা) |
পটাশিয়াম | ১৮৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.২ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম: | ১৮ মিলিগ্রাম |
রামবুটানে উপকারিতা
১. এই ফলটির হজমে সহায়তা করে।
২. ত্বকে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধের সহায়তা করে।
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে।
৫. চুল পড়া বন্ধে সহায়তা করে।
রামবুটান ফলের পুষ্টিগুণ
১.ভিটামিন সি: রামবুটান ফল ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন সি শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, কোলাজেন তৈরি করতে, এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
২.ভিটামিন বি৬: রামবুটান ফল ভিটামিন বি৬-এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন বি৬ শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা শর্করা, প্রোটিন, এবং ফ্যাটের বিপাকে সাহায্য করে।
৩.পটাশিয়াম: রামবুটান ফল পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস। পটাশিয়াম শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে, হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, এবং শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪.ম্যাগনেসিয়াম: রামবুটান ফল ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, শক্তির উৎস, এবং পেশী সংকোচনের জন্য প্রয়োজনীয়।
রামবুটান সংরক্ষণ
রামবুটান ফলটির থোকায় থোকায় গাছে ধরে থাকে। এই ফলটি পরিপক্ক হবার পর থেকে গাছে মোটামুটি ৩০ দিন ভালো থাকে। গাছ থেকে আহরণের পর এই ফলটি ১৫ দিন নরমালি ভালো থাকে। আর যদি ফ্রিজে রাখা যায় তাহলে একমাস পর্যন্ত ভালো থাকে। এই ফলটির সহজে পচে যায় না ।
রামবুটানের দাম
বাংলাদেশের বাজারে এই ফলটি যেহেতু নতুন সে হিসাবে দামটা বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। ১২০০-১৫০০ টাকা কেজি দরে আপাতত রাজধানী ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চাহিদা এবং জোগানের উপর ভিত্তি করে দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে । মালয়েশিয়াতে প্রতি কেজি রামবুটানের দাম বাংলাদেশি টাকায় ৩০০-৩৫০ টাকা । আমাদের পাশ্ববর্তী দেশে ভারতে প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রামবুটানের চারার দাম
এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ব্যাপক জনপ্রিয় ফল । এটির চারা সরবরাহ করা একটু কঠিন। তবে বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় এই ফলটির চারা পাওয়া যায়। ছোট চারার মূল্য ২০০০ টাকা প্রতি পিস। আর বড় চারার মূল্য ৫-৮ হাজার টাকা। এই গাছটির বয়স ৭ বছর হতে ফল ধরা শুরু হয় । গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলন বৃদ্ধি পেতে থাকবে।