প্রত্যাশিত বস্তু লাভে ব্যর্থ হওয়ার ফলে ব্যক্তির মানসিক অবস্থার যে বিপর্যয় ঘটে তাকে হতাশা বা Frustration বলে।
অনেক সময় দেখা যায় যে, কোনো একটি লক্ষ্যবস্তু প্রাপ্তিতে যদি বেশি সময় লেগে যায় তা হলে ব্যক্তির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। দৈনন্দিন জীবনে আমরা হাজার হাজার সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। এসব সমস্যার মধ্যে অনেকগুলো সমাধান করতে পারি, আবার দু-একটির সমাধান করতে ব্যর্থ হই।যে কোনো ধরনের সমস্যাই ব্যক্তির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করবে এমন বলা যায় না। সাধারণত যেসব সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা নানা রকম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে চেষ্টা করেও বিফল হই; সেসব ক্ষেত্রে হতাশার পরিমাণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ লক্ষ্যবস্তুতে উপনীত হওয়ার জন্য চেষ্টা করে বিফল হওয়াকে হতাশা বলে। হতাশার ফলে ব্যক্তির মধ্যে যে বেদনাদায়ক অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে চাপ (stress) বলে। হতাশার পরিমাণ বেশি হলে ব্যক্তির মধ্যে অগ্রাসন (aggression) ভাব দেখা যায় ।
হতাশার কারণ
হতাশা বা ব্যর্থতা বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হতে পারে। নিচে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো :
অর্থনৈতিক বৈষম্য
অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে ব্যক্তির মধ্যে হতাশা দেখা দিতে পারে। প্রথমত দেশের উচু শ্রেণি ও নিচু শ্রেণির মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেশি হলে নিচু শ্রেণির লোকদের বা কম আয়ের লোকদের মধ্যে হতাশার লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
দৈহিক অযোগ্যতা
দৈহিক অযোগ্যতা ও মানসিক অক্ষমতা ব্যক্তির চাহিদা পূরণে বাধা প্রদান করে। এরূপ বাধার কারণে ব্যক্তি তার লক্ষ্যবস্তু অর্জনে ব্যর্থ হয়। দৈহিক অযোগ্যতা যেমন, অন্ধত্ব, বধিরতা, বা অন্যান্য দৈহিক দুর্বলতার কারণে ব্যক্তি তার লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তি দৈহিক অযোগ্যতার ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
দ্বন্দ্ব
দ্বন্দ্ব থেকে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে। দুটি সমান শক্তিসম্পন্ন লক্ষ্যবস্তু একসাথে উপস্থিত হলে আমর কোনটিকে গ্রহণ করব এবং কোনটিকে বর্জন করব এ নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ি। লক্ষ্যবস্তু ভালো ও মন্দ উভয় প্রকৃতির হতে পারে। আমরা সাধারণত বস্তুর ভালো দিক দ্বারা আকৃষ্ট হই এবং বস্তুর মন্দ দিক দ্বারা আকৃষ্ট হই না। কিন্তু যদি দুটি লক্ষ্যবস্তুরই মন্দ দিক থাকে এবং ভালো দিক যদি না থাকে তা হলে দুটি বস্তুর মধ্যে একটিকে গ্রহণ করতে গিয়ে আমরা দ্বন্যে পড়ি। এরূপ ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বের সার্থক সমাধান না হলে হতাশার সৃষ্টি হয়। যেমন, একটি খুনের মামলায় একজন ব্যক্তির সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। এর একটি পথ হলো তাকে খুনের মামলায় সাক্ষী হতে হবে এবং দ্বিতীয় পথ হলো সাক্ষী হতে না চাইলে আসামি হিসেবে কাঠ গড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এ অবস্থায় দুটি পথই তাকে বিকর্ষিত করবে। এরূপ পরিস্থিতির। সার্থক সমাধান না হলে ব্যক্তি হতাশাগ্রস্ত হতে পারে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ
প্রাকৃতিক অবস্থার কারণে অনেক সময় ব্যক্তি হতাশাগ্রস্ত হতে পারে। যেমন, একজন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবার জন্য বাসযোগে যাত্রা করল। পথিমধ্যে বাসটির যান্ত্রিক গোলযোগের ফলে পরীক্ষার্থী সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে না যাবার আশঙ্কায় হতাশাগ্রস্ত হতে পারে। আবার অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগও ব্যক্তির হতাশার কারণ হতে পারে।
সামাজিক পরিবেশ
সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে ব্যক্তির মধ্যে হতাশা দেখা দিতে পারে। সামাজিক রীতি-নীতি অনেক সময় ব্যক্তির লক্ষ্যবস্তু অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, পারিবারিক রীতি-নীতি ও বিধি-নিষেধের কারণে অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা লক্ষ্যবস্তু অর্জনে ব্যর্থ হয়। তাছাড়া, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটি দেশের সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট সহায়ক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কোনো কারণে বিনষ্ট হলে সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয়-ভীতি, দ্বন্দ্ব, মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা বৃদ্ধি পায়।
হতাশা থেকে মুক্তি পাবার উপায়
১.স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাবার গ্রহণ করা ।
২.প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটানো। নতুন নতুন লোকজনের সাথে পরিচিত হওয়া।
৩.লক্ষ্যবস্তু নির্ধারন করা যা আপনাকে আরো উদ্দীপিত এবং আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে ।
৪.ধ্যান বা যোগব্যায়াম করা যা আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
৫.পযাপ্ত পরিমাণ নিয়মিত ঘুমায় ।
৬.অধিক চবিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
৭.নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করা।
পরিশেষে হতাশা আপনার সামগ্রিক জীবনের একটি প্রতিচ্ছবি। কম বেশি সবার জীবনে হতাশা থাকবেই তাই আমাদের উচিত ধৈর্য্য ধারণ চিন্তা ভাবনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া ।