ওজোন স্তর (Ozone Layer)
ভূ-পৃষ্ঠ থেকে 12-540 কিলোমিটার পর্যন্ত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ওজোন স্তর বিদ্যমান। সুর্যালোর থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনি (LUV) রশ্মির প্রভাবে ওজোন স্তরে ওজোন ও অক্সিজেন গতিশীল সাম্যাবস্থায় (30) UV 20,) থাকে। ওজোন স্তরের গভীরতা মাপার একক হল জবসন ইউনিট (DLI)। প্রমাণ বায়ুচাপ্তে-0.01 mm পুরু ওজোন স্তর= 1DU
অক্ষত অবস্থায় ওজোন স্তরে ওজোন ও অক্সিজেনের ঘনত্ব স্থির ছিল। কিন্তু মনুষ্য সৃষ্ট বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের CFC অণু ওজোন স্তর ধ্বংসে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
ওজোন স্তরের ক্ষয়
বৃটিশ বিজ্ঞানী জো ফোরমান (Jo Forman) সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন যে আন্টার্কটিকা মহাদেশের উপরিভাগের ওজোন স্তর পাতলা হয়ে গেছে। পরে গবেষণা করে দেখা গেল শুধু আন্টার্কটিকা নয় ওজোন স্তরের সর্বত্র কম বেশি ওজোন ডা পাতলা যয়ে গেছে। মানুষ তার আরাম আয়েশ ও ভোগ বিলাসে CFC ব্যবহার করেছে, যা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে জমা হয়ে ক্রমাগত ওজোন ভর ধাংস করে চলেছে। ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলো প্রধানত দায়ী। কারণ তারাই CFC আবিষ্কার ও ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহার করেছে।
সূর্য থেকে আগত UV রশ্মির প্রভাবে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে সম্বিয় CFC হতে ক্লোরিন ফ্রি-রেডিক্যাল (CI) মুক্ত করে। এটি শিকল বিক্রিয়ার মাধ্যমে ওজোন স্তর ধ্বংস করে। প্রতিটি CI’ প্রায়। লক্ষ ওজোন অণু ধ্বংস করে ফেলে। এভাবে CI’ এর ধ্বংসযজ্ঞে চক্রাকারে চলতে থাকে। CFC ছাড়াও হ্যালোনসমূহু (হ্যালোকার্বন), NO, NO, CH, ওজোন স্তর ধ্বংসে সরাসরি অংশগ্রহণ করে থাকে।
ওজোনস্তর ক্ষয়ের প্রভাব
মানুষের উপর প্রভাব: ওজোন স্তর ক্ষয় বা ধ্বংস প্রাপ্ত হলে UV রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে চলে আসবে। এতে মানুষের ত্বকে ক্যান্সার ও চোখে অসময়ে ছানি পড়বে। ত্বকে ক্যান্সারের জন্য UV রশ্মি অনেকাংশে দায়ী। এ রশ্মির প্রভাবে মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, শ্বাসনালীর প্রদাহ, ব্রংকাইটিস ও ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ হয়।
উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর উপর প্রভাব: UV রশ্মির প্রভাবে সালোকসংশ্লেষণ ব্যাহত হয়। এতে উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন হ্রাস
পায়। UV রশ্মির প্রভাবে ফাইটোপ্লাঙ্কটনের উৎপাদন হ্রাস পায়। ফলে মাছসহ যেসব জীব এদের খেয়ে বেঁচে থাকে
তাদের উৎপাদন হ্রাস পাবে। খাদ্যশস্যে তেজস্ক্রিয়তা দেখা দিবে। এর প্রভাবে ফল ও বীজের উৎকর্ষতা হ্রাস পাবে।
জলবায়ুর উপর প্রভাব: বায়ুমণ্ডলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে ওজোন স্তর বিলুপ্ত হলে UV রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে আসবে, এতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলন বৃদ্ধি পাবে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় পৃথিবীর
বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্নভূমি পানির নিচে ডুবে যাবে।
ওজোন স্তর ক্ষয় নিয়ন্ত্রণের উপায়
ওজোন স্তর ক্ষয়রোধের জন্য CFC-এর ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। কলকারখানা, মোটরগাড়ি ইত্যাদি হতে উৎপন্ন NO, গ্যাস পরিশোধন বা শোষণের ব্যবস্থা করতে হবে। জৈব গ্যাসের উৎস নিয়ন্ত্রণ, ব্যবহার কমানো এবং বিকল্প জ্বালানি উদ্ভাবন করা, প্রতিরোধক হিসেবে ফুলারিন জাতীয় যৌগ উৎপাদন বাড়ানো এবং তা বায়ুমণ্ডলের যে সকল অঞ্চলে ওজোন স্তর ক্ষয় বেশি হয়েছে সেখানে স্প্রে করা। অগ্নিনির্বাপক হিসেবে যে সকল হ্যালোনসমূহ (হ্যালো কার্বন- যাদের অধিকাংশের মধ্যে হ্যালোজেন হিসেবে ব্রোমিন থাকে) ব্যবহার করা হয় যেমন: হ্যালোন -1211 (CF₂BrCI), হ্যালোন-1301 (CF3Br) ইত্যাদির ব্যবহার হ্রাস করা
Read more :আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাস